স্থানীয় শত্রুতার জেরেই কক্সবাজারে গিয়ে টিপুকে হত্যা, ধারণা পরিবারের
নিজস্ব প্রতিবেদক জিএনবাংলা টিভি চ্যানেল।
খুলনা, জানুয়ারি ১০, ২০২৫ ৮:১০ মিনিটে /জিএনবাংলা টিভির চ্যানেল এর তদন্তের অভিযান কক্সবাজারের কিছু তদন্তের অংশ হিসেবে কিচ্ছু তদন্ত তথ্যের পর্ব ১/
শোকে মুহ্যমান কক্সবাজারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত খুলনা নগরীর দৌলতপুর এলাকার সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুর পরিবারের সদস্যরা। তাদের ধারণা স্থানীয় শত্রুতার জের ধরে খুলনার সন্ত্রাসীরাই কক্সবাজারে গিয়ে টিপুকে হত্যা করেছে।নিহত টিপু নগরীর ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও দৌলতপুর থানার দেয়ানা উত্তরপাড়া এলাকার মো. গোলাম আকবরের ছেলে। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন সেখানে ভিড় করেছেন। সন্তানের শোকে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন তার বাবা গোলাম আকবর। কান্নায় ভেঙে পড়েন টিপুর দুই ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সদস্যরা।
টিপুর এক স্বজন সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজার থেকে একজন ফোন করে বৃহস্পতিবার রাতে তার ভাইয়ের নিহতের খবর জানায়। রাতেই পরিবারের সদস্যরা তার ভাইয়ের লাশ আনার জন্য রওনা দেয়।
তিনি বলেন, এখানকার শত্রুরাই টিপুকে কক্সবাজারে হত্যা করেছে। কক্সবাজার এলাকায় কোনো লোকের সঙ্গে তার কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। খুলনার কেউ কক্সবাজারের কোনো ভাড়াটিয়া খুনী দিয়ে অথবা এখান থেকে লোক পাঠিয়ে হত্যা করিয়েছে বলে তার ধারণা। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।নগরীর ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শেখ শামসুদ্দিন আহম্মেদ প্রিন্স বলেন, টিপু এলাকায় জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিলেন। কক্সবাজারে কে বা কারা তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। তিনি এই হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।টিপুর পরিবারের সদস্যরা জানান, শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার পুলিশের কাছ থেকে লাশ বুঝে নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন স্বজনরা। আজ জোহরের নামাজের পর খুলনার দৌলতপুর থানার দেয়ানা উত্তরপাড়া মাঠে টিপুর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। পরে সরকারপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হবে।
গোলাম রব্বানী টিপুদের আদি বাড়ি খুলনার তেরখাদা উপজেলার আনন্দনগর গ্রামে। তার বাবা গোলাম আকবর দৌলতপুর মহসীন বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। গত প্রায় ৪০-৪৫ বছর ধরে তারা দৌলতপুর দেয়ানা উত্তরপাড়া এলাকায় বসবাস করতেন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে টিপু ছিলেন মেঝ। এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা ছিলেন তিনি।
স্থানীয় লোকজন জানান, ছাত্রজীবনে টিপু ছাত্রমৈত্রীর রাজনীতি করতেন। পরবর্তীতে চরমপন্থী দলে সম্পৃক্ত হন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি এলাকায় ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেন। যোগ দেন স্বেচ্ছাসেবক লীগে। একপর্যায়ে মহানগর সহ-সভাপতির পদ পান।
২০২৩ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত কেসিসি নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।
২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর দৌলতপুরে খুন হন নিষিদ্ধ সংগঠন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি নেতা শেখ শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদ। এই মামলায় টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়।স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতারা জানান, কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই এলাকার সবার সঙ্গে টিপুর সুসম্পর্ক ছিল। তার দ্বারা কেউ নির্যাতিত হননি। বরং পুলিশের হয়রানির হাত থেকে অনেককেই বাঁচিয়েছেন তিনি। গত ৫ আগস্টের পর প্রথম কয়েকদিন গাঁ ঢাকা দিলেও পরে এলাকায় ফেরেন। অপসারিত হওয়ার আগ পর্যন্ত নিয়মিত তিনি নগর ভবনে যাতায়াত করতেন।
নগরীর দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, টিপুর বিরুদ্ধে দৌলতপুরে থানায় দুটি মামলা রয়েছে। দুটিতেই তিনি জামিনে ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আমরাও খোঁজখবর নিচ্ছি।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সিগাল পয়েন্টে সন্ত্রাসীদের গুলিতে টিপু নিহত হন। এ ঘটনায় রাতেই খুলনা সিটি করপোরেশনের ১৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান ইফতেখার চালুকে আটক করে র্যাব।নিউজ কক্সবাজারে ২ পর্ব কাউন্সিলর টিপু হত্যার ঘটনায় আ. লীগ নেতা আটক উৎসবের আলো
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২৫ /
এম কে আলম চৌধুরী
কক্সবাজারে কাউন্সিলর টিপু হত্যার ঘটনায় আ. লীগ নেতা আটক
উধাও সঙ্গে থাকা তরুণী
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে খুলনার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু হত্যার ঘটনায় একজনকে আটক করেছে র্যাব।
আটক শেখ হাসান ইফতেখার ওরফে চালু খুলনার ১৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। তিনি ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
র্যাব-১৫ অধিনায়ক লে. কর্ণেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাত ১২টার পর কক্সবাজার শহরের কলাতলী সড়কের হোটেল গোল্ডেন হিল থেকে ইফতেখারকে আটক করা হয়।তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে র্যাব জানায়, ইফতেখারসহ নিহত গোলাম রব্বানী টিপু বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে কক্সবাজারে আসেন। হোটেল গোল্ডেন হিলের অতিথি লিপিবদ্ধ বই এ দেখা গেছে আটক ইফতেখার ও নিহত গোলাম রব্বানী টিপুর সঙ্গে রুমি (২৭) নামের এক নারীও সকাল ৭টায় হোটেলে উঠেন।
রুমি নামের ওই নারী পলাতক বলে জানান র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক সাজ্জাদ হোসেন।
র্যাব আরও জানায়, আমাদের হাতে আসা হোটেলটির অভ্যর্থনা কক্ষের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩১ মিনিটে ওই নারীসহ নিহত কাউন্সিলর টিপু হোটেল থেকে বেরিয়ে যান।এরপর রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল সী-গালের সামনের ফুটপাতে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন টিপু।